রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

সুপার সাইক্লোনে রূপ নিল আম্ফান, বেড়েছে গতি-শক্তি

তরফ নিউজ ডেস্ক : আরও গতি ও শক্তির সঞ্চার করে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান।

ইতিমধ্যেই, অতি প্রবল শক্তিশালী তথা এক্সট্রিম সিভিয়ার সাইক্লোন থেকে সুপার সাইক্লোনে উন্নীত হয়েছে এটি। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২২৩ কিলোমিটার। যা বিকেল পর্যন্ত ছিল ২১০ কিলোমিটারেরও কম। এ ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের এখন যে বেগ তা সিডরের চেয়েও বেশি। ফলে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

এদিকে, শক্তির সঞ্চার করে গতি বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। এটি এখন প্রায় ২২ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। যে গতি বিকেল পর্যন্ত ছিল ১৪ কিলোমিটারের চেয়ে একটু বেশি।

সোমবার (১৮ মে) সন্ধ্যার পর আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অরগানাইজেশনের (ডব্লিওএমও) ওয়েবসাইটে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যদি বাংলাদেশের উপকূল থেকে আনুমানিক এক হাজার কিলোমিটার দূরেও এটির অবস্থান হয়। তাহলে ২২ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হলেও আরও প্রায় ৪৫ ঘণ্টা পরে অর্থাৎ বুধবার (২০ মে) বিকেলের এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। যদি না এটির গতি আরও বাড়ে-কমে।

সংস্থাটি বলছে, আরেকটু সামনে আগালেই এ ঘূর্ণিঝড়ের ঘণ্টায় বাতাসে বেগ আরও বাড়তে পারে।

যদিও উপকূলের দিকে আসতে আসতে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি ও গতি ক্রমশই কমতে থাকে। ইতোপূর্বে আঘাত হানা দুই ঘূর্ণিঝড় ফণী ও বুলবুলের অভিজ্ঞতাও একই কথা বলে। তবে এই দুই ঘূর্ণিঝড়ের কোনোটিই সুপার সাইক্লোন ছিল না।

এদিকে সোমবার (১৮ মে) সন্ধ্যা ৬টার তথ্য বিশ্লেষণ করে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে সুপার ঘূর্ণিঝড় আকারে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে শেষরাত থেকে ২০ মে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে ঝড়ো হাওয়া থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে তা দ্রুত কাটার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়টি দু-একদিনের মধ্যেই আঘাত হানতে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য, কোনো ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হলে সেটাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com